হানাফী মাযহাব
ইসলামী শরীয়তের সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী ঢালটির নাম “হানাফী মাযহাব”। এই মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা যিনি, তাঁকে সকল মাযহাবের নির্ভরযোগ্য ফকীহ ও মুহাদ্দেসগণ “ইমাম আযম” বলে জানেন ও মানেন। তিনি হলেন ইমাম আবু হানীফা নু’মান বিন সাবিত (রা:)। হানাফী মাযহাব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইলমে ফিকহ’রও গোড়াপত্তন করেছিলেন তিনিই। তাঁর পথ ধরেই ইমাম মালেক, ইমাম শাফেয়ী ও আহমদ বিন হাম্বল (রা:) আপন আপন মাযহাব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। একটি গাছের চারটি ঢালে অনেক পাতা। তবে দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশী পাতা ঝুলছে ঐ হানাফী ঢালে।


ইসলামী শরীয়তের সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী ঢালটির নাম “হানাফী মাযহাব”। এই মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা যিনি, তাঁকে সকল মাযহাবের নির্ভরযোগ্য ফকীহ ও মুহাদ্দেসগণ “ইমাম আযম” বলে জানেন ও মানেন। তিনি হলেন ইমাম আবু হানীফা নু’মান বিন সাবিত (রা:)। হানাফী মাযহাব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইলমে ফিকহ’রও গোড়াপত্তন করেছিলেন তিনিই। তাঁর পথ ধরেই ইমাম মালেক, ইমাম শাফেয়ী ও আহমদ বিন হাম্বল (রা:) আপন আপন মাযহাব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। একটি গাছের চারটি ঢালে অনেক পাতা। তবে দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশী পাতা ঝুলছে ঐ হানাফী ঢালে।
আমাদের সমাজে অনেক বিভ্রান্তির মধ্যে একটি চিহ্নিত গোষ্টী ফিক্হ ও হানাফী মাযহাব নিয়ে পানি ঘোলা করছে। কেউ কেউ ফিক্হ-ফতোয়ার কথা শুনলে আঁতকে উঠেন। ভাবটা এমন যে, ইসলামের সাথে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক একটা কিছুর নাম “ফিক্হ”। অনেকে আবার হানাফী মাযহাবের কথা শুনলে বক্র চোখে তাকান। কেউ বলেন, ইমাম আবু হানিফা হাদীস জানতেন না বিধায় হানাফী মাযহাব হাদীস বিরোধী। ইত্যাদি অনেক কথা। কিন্তু গভীর গবেষণার চোখে তাকালে দেখা যাবে যে, ইসলামী শরীয়তের চার মাযহাবের মধ্যে কুরআন ও হাদীসের উপর নির্ভরশীলতা যে মাযহাবের সবচেয়ে বেশী-তার নাম “হানাফী মাযহাব”। হাজার বছর ধরে নির্ভরযোগ্য মুহাদ্দিস ও ফকীহগণের গবেষণার নির্যাস তাই প্রমাণ করে। আলোচ্য নিবন্ধে আমরা এ কথাই প্রমাণ করার চেষ্টা করব যে, “হানাফী মাযহাবের হাদীস নির্ভরতা সবচেয়ে বেশী”।
দৃষ্টি কোন-
হানাফী মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা যেহেতু ইমাম আযম আবু হানিফা (রা:), সেহেতু তাঁর জ্ঞানের গভীরতা ও সঠিকতার উপরই মূলতঃ হানাফী মাযহাবের সঠিকতা ও গভীরতার বিষয়টি নির্ভরশীল। কারণ, আহরিত জ্ঞানের শতভাগ ব্যবহারে তাঁর নিষ্ঠা ও আমানতদারী প্রশ্নাতীত। আসুন আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করি।
ইমাম আবু হানীফা (রা:) খাইরুল কুরুনের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন-
রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিন যুগকে উত্তম যুগ বলেছেন, সাহাবীদের যুগ, তাবেয়ীদের যুগ ও তাবে তাবেয়ীদের যুগ।(১) এই হাদীস দ্বারা বুঝা যায় স্তরভিত্তিক এই তিন যুগের মানুষ জ্ঞানে-গুনে, তাকওয়া, বুজুর্গী এবং আমানতদারীতে নি:সন্দেহে পরর্বতী যুগের মানুষের চেয়ে অগ্রগামী। সুতরাং যেহেতু ইমাম আবু হানিফা (রা:) ছিলেন এই তিন যুগের দ্বিতীয় (তাবেয়ী) যুগের অন্তর্ভূক্ত, (যে সম্মান অন্য তিন ইমামের নেই)(২) সেহেতু তাঁর প্রতিষ্ঠিত মাযহাবও উত্তমতা ও সঠিকতার বিবেচনায় অন্যান্য মাযহাবের তুলনায় শ্রেষ্ঠ হবে, এটাই স্বাভাবিক।
ইমাম আবু হানিফা (রা:) এর জ্ঞান সম্পর্কে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী-
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন ‘দ্বীন সুরাইয়া নক্ষত্রের দূরবর্তী উচ্চতায় চলে গেলেও পারস্যের এক ব্যক্তি তা সেখান থেকে পুনরুদ্ধার করবে। (৩) হাদীসটি ন্যূনতম দশজন সাহাবী বর্ণনা করেছেন। অন্য হাদীসে পাওয়া যায়, ইলম সুরায়া নক্ষত্রের দূরবর্তী উচ্চতায় চলে গেলেও পারস্যের এক বা একাধিক ব্যক্তি তা সেখান থেকে পুনরুদ্ধার করবে। ৪) এই হাদীসটি অসংখ্য মুহদ্দিসীনে কেরাম আপন আপন কিতাবে বর্ণনা করেছেন। ইমাম জালালুদ্দীন সূয়ুতী (রা:) ও ইবনে হাজর হায়তামী (রা:) সহ অনেক নির্ভরযোগ্য হাদীসবিশারদ এই হাদীসের দ্বারা ইমাম আযম আবু হানিফা (রা:) কে উদ্দ্যেশ্য করা হয়েছে মর্মে উল্লেখ করেছেন।(৫) এখানে উল্লেখ্য যে, পারস্য বলতে অনারব বুঝানো হয়েছে এবং আরো উল্লেখ্য যে, এ হাদীস দ্বারা নবী যুগের পরবর্তী কোন অনারবের ব্যাপারে ভবিষ্যৎবাণী করা হয়েছে বিধায় হাদীসটি হযরত সালমান ফারসী (রা)’র ক্ষেত্রে প্রয়োজ্য নয়।
ইমাম আজম আবু হানিফা (রা:) সম্পর্কে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামার এ ভবিষ্যৎবাণী প্রকারান্তরে হানাফী মাযহাবের সত্যনিষ্ঠতার প্রমাণ বহন করে।
ইমাম আযম সম্পর্কে সমসাময়িক মুহাদ্দিস ও ফকীহগণের মতামত-
ইমাম আযম আবু হানিফা (রা:) সম্পর্কে তাঁর সমসাময়িক মুহাদ্দিস ও ফকীহগণ যে সকল মতামত ব্যক্ত করেছেন তদ্বারা ইমাম আবু হানিফা (রা:) এর জ্ঞানের গভীরতা ও হানাফী মাযহারের সত্য নিষ্ঠতার প্রমাণ যেমন পাওয়া যায়, তেমনি বর্তমান যুগে ঐ সকল সমালোচকদের যথেষ্ট জবাবও তৈরি হয়, যারা বলে হানাফী মাযহাব হাদীস বিরোধী বা ইমাম আযম আবু হানিফা (রা:) হাদীস জানতেন না।
ইমাম শাফেয়ী (রা) বলেন, ‘কেউ ফিক্হ শিখতে চাইলে সে যেন আবু হানিফা (রা) ও তাঁর ছাত্রদের সাহচর্যে নিজেকে নিবিষ্ঠ রাখে। কারণ, ইলমে ফিকহ্ এর ক্ষেত্রে সকলেই আবু হানিফা (রা) এর বংশধর।’ (৬) বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ ও ইবনে মাযার দাদা ওস্তাদ বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দেস ইমাম ইয়াহইয়া বিন সাঈদ কাত্তান (রাঃ) বলেন, ‘আল্লাহর শপথ! শরিয়তের মাসআলার ক্ষেত্রে ইমাম আবু হানিফা এর রায় থেকে অধিকতর সুন্দর রায় আমরা শুনিনি। আমরা তাঁর প্রায় সব ফতোয়াই গ্রহণ করে নিয়েছি।’(৭) প্রশ্নাতীত ভাবে গ্রহনযোগ্য জগদ্বিখ্যাত আরেকজন মুহাদ্দেস সুফিয়ান বিন ওয়াইনাহ (রাঃ) বলেন, ‘মাগাযী (৮) শিখতে হলে মদীনা মুনাওয়ারায়, হজ্জের মাসায়েল শিখতে হলে পবিত্র মক্কায় এবং পুরো ফিকহ শিখতে হলে কুফায় ইমাম আবু হানিফা (র:) এর শিক্ষালয়ে যেতে হবে।’(৯)
ইমাম শাফেয়ী (রা) এর ওস্তাদ ইমাম ওয়াকী বিন র্যারাহ (রা) এর সামনে একটি জটিল বিষয়ের হাদীস উল্লেখ করা হলে তিনি দাঁড়িয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলতে লাগলেন, ‘অনুতাপ করে ফায়েদা কি! ঐ বৃদ্ধ লোকটি (আবু হানিফা) কোথায়? এই সমস্যার বৃত্ত থেকে তিনিই পারেন আমাদেরকে মুক্ত করতে।(১০) তিনি আরও বলেন, ইমাম আবু হানিফা (রা) এর ফিকহ’র দশভাগের এক ভাগও আমার ভাগ্যে জুটলে ধন্য হতাম।’ (১১) ইলমে হাদীসের সাগর আব্দুল্লাহ বিন মুবারক (রা) বলেন, ‘ইমাম মালেক (রা), ইমাম সুফিয়ান সওরী (রা) ইমাম আবু হানিফা (রা) এই তিনজনের মধ্যে ইমাম আবূ হানিফা (রা:) এর গবেষণা সর্বাধিক সুন্দর, গভীর মেধা সম্পন্ন, এবং ফিকহ’র ক্ষেত্রে অধিকতর সুক্ষ্ম। তিনজন থেকে তিনিই বড় ফকীহ।’(১২)
ইমাম মালেক (রা) বলেন, ‘ইমাম আবু হানিফা (রা) কে এতই মেধা সম্পন্ন পেয়েছি যে, পাথরের খুঁটিকেও যদি তিনি সোনার দাবী করে বসেন তবে অকাট্য দলীল দিয়ে তা প্রমাণও করে ছাড়েন।’(১৩) ইলমে হাদীসের মহাসাগর ইমাম সুফিয়ান সওরী (রা) বলেন, ‘জমীনের উপরে বসচেয়ে বড় ফকীহ হযরত ইমাম আবু হানিফা (রা)।’(১৪) ইমাম বুখারী (রা:) এর ওস্তাদ আবু আসেম (রা) ইমাম আবু হানিফা ও সুফিয়ান সওরীর ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি উত্তরে বলেছিলেন, ‘ইমাম আবু হানিফা (রা:) এর নগন্য একজন ছাত্র বা গোলামও ইমাম সুফিয়ান সওরী (রা:) থেকে অধিক ফিক্হ জানেন।’(১৫) বিশ্ববিখ্যাত এ রকম হাজারও মুহাদ্দেস আছেন যারা ইমাম আযম আবু হানিফা (রা) এর জ্ঞানের গভীরতার স্বীকৃতি দিয়েছেন। হানাফী মাযহাব হাদীস বিরোধী হলে জগদ্বিখ্যাত এ সকল মুহাদ্দেসগণ কখনই এমন স্বীকৃতি দিতেন না । আর হাদীস ছাড়া ফিকহ তৈরী হয় না। দুধ থেকে যেমন পনির তৈরী হয় তেমনি কুরআন-হাদীস থেকে ফিকহ উৎসারিত হয়। কাউকে ফকীহ হিসেবে মেনে নিয়ে যদি বলা হয় তিনি হাদীস জানেন না-তবে তা সাংঘর্ষিক কথা। আ’মাশ (রা:) ছিলেন অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য মুহাদ্দেস। ইমাম আবু হানিফার (রা:) এই ওস্তাদ আপন শিষ্যের মেধা ও মননের গভীরতা দেখে দার্শনিক ভঙ্গিতে বলেছিলেন, ‘হে ফকীহদল, তোমরা হলে অভিজ্ঞ ডাক্তার, আর আমরা মুহাদ্দেসরা ফার্মাসিষ্ট।’(১৬) একই কথা ইমাম আওযায়ীও (রা:) বলেছেন। ইমাম ইবনে ওয়াহাব (রা) এর উক্তিটি আরও স্পষ্ট, ‘যে মুহাদ্দেস ফিকহর ক্ষেত্রে কোন নির্ভরযোগ্য ইমাম মানে না, সে গুমরাহ। মহান আল্লাহ যদি ইমাম মালেক ও লাইস (রা:) কে দিয়ে আমাদের রক্ষা না করতেন তবে আমরাও পথভ্রষ্ট হয়ে যেতাম।’(১৭) ফিকহ বা ফতোয়ার কথা শুনলেই আঁতকে উঠার কোনই কারন নেই। ফকীহ হওয়া ভাগ্যের বিষয়। হাদীস শরীফে দেখুন, ‘আল্লাহ যাঁর মঙ্গল চান, তাঁকে ধর্মের ফকীহ বানিয়ে দেন।’(১৮) অন্য হাদীসে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘এই দীনের ফাউণ্ডেশন হল ইলমে ফিকহ।’(১৯) পবিত্র কুরআনের সূরা তাওবার ১২২ নং আয়াতের মর্মানুযায়ী দেখা যায় যে, লাখো মানুষের মাঝে ফকীহ হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন দু’একজন। এ কথাগুলি সামনে রাখলেই ইমাম আবু হানিফা (রা) ও হানাফী মাযহাব সম্পর্কে সকল সংশয় দূর হয়ে যাবে। সমসাময়িক ও পরবর্তী হাজারও মুহাদ্দেস এবং ওলামায়ে কেরাম যাঁকে উম্মতের শ্রেষ্ঠ ফকীহ মেনে নিয়েছেন, মুহাদ্দেসদের গুমরাহ হওয়া থেকে বাঁচতে হলে যেখানে ফকীহ ইমাম মানা অপরিহার্য, ইলমে ফিক্হ যেখানে আল্লাহ তা’লার বিশেষ নেয়ামত ও দ্বীনের ফাউণ্ডেশন, সেখানে উম্মতের শ্রেষ্ঠতম ফকীহ হিসেবে স্বীকার্য্য ইমাম আবু হানিফা (রা) ও হানাফী মাযহাব সম্পর্কে সৌদি আরব ও কুয়েতীদের মদদে বিশ্বে যেভাবে নগ্ন সমালোচনা চালানো হচ্ছে, তা এক কথায় আমাদের ধর্মের জন্য লজ্জা ও যার পর নাই পরিতাপের। হাদীস মুখস্ত করে মুহাদ্দেস হওয়া যায়। কিন্তু ফিক্হ মুখস্ত করে ফকীহ হওয়া যায় না। এটাই তো কারণ, যে লক্ষাধিক সাহাবীর (রা:) মধ্যে অনেকেই কমবেশী হাদীস বর্ণনাকারী। আর ফতোয়াদানকারী সাহাবী (রা:) মাত্র ১৩০ জনের মত এবং তার মধ্যেও মুজতাহেদ সাহাবী (রা:) কমবেশ ১০ জন।’(২০) তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। কারণ, হাদীস শুনলেই যে ফিকহে হাদীস বুঝে আসবে তা কিন্তু নয়। অনেক সময় হাদীস শ্রবণকারী তার উর্ধ্বতন বর্ণনাকারীর তুলনায় ফিকহে হাদীস বেশী বুঝেন। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ ঐ ব্যক্তিকে সতেজ রাখুন যে আমার কোন হাদীস শুনে অন্যের কাছে পৌছে দেয়া পর্যন্ত তা মুখস্থ রেখেছে। কারণ, অনেক ফিক্হ বহনকারী ঐ ফিকহকে পৌঁছে দেন যে তার চেয়েও অধিকতর বড়মানের ফকীহ তাঁর কাছে এবং অনেকে এমন আছেন যারা ফিক্হ বহন করে চলেন কিন্তু ফকীহ নন।’(২১) হাদীস বর্ণনাকারী লক্ষাধিক সাহাবীর মধ্যে ফকীহ সাহাবী কম হওয়া এবং উম্মতের মধ্যে গুটি কয়েকজন মাত্র ফকীহ ও মুজতাহেদ হওয়ার বাস্তব কারণ এটাই। সাহাবীদের পরে উম্মতের গুটি কতেক সম্মানীয় ফকীহদের মধ্যে ইমাম আবু হানিফা (রা) সকলের চেয়ে শ্রেষ্ঠ।
সরাসরি সাহাবীদের কাছ থেকে ইমাম আযম আবু হানিফা (রা) এর ইলমে হাদীস শিক্ষাগ্রহণ-
পূবের্ই বলা হয়েছে ইমাম আযম (রা:) তাবেয়ী ছিলেন। চার ইমামের অন্য কারও এই মর্যাদা নেই। সরাসরি অনেক সাহাবীর সাথে সাক্ষাৎ করে হাদীসের শিক্ষা লাভ করেছেন ইমাম আবু হানিফা (রা:)। যে সকল সাহাবীদের সাথে তাঁর সাক্ষাৎ হয়েছিল তাঁদের মধ্যে হযরত আনাস বিন মালেক (রা:), হযরত আব্দুল্লাহ বিন হারেস (রা), হযরত আব্দুল্লাহ বিন আবি আওফা (রা) অন্যতম। সাহাবীদের সাথে ইমাম আবু হানিফা (রা:) এর সাক্ষাৎ ও শিক্ষা লাভ করাকে অস্বীকার করা কোন মতেই গ্রহণ যোগ্য নয়। কারণ, ইমাম হুসাইন বিন আলী সাইমিরী (রা:) (ওফাত ৪৩৬ হিজরী), ইবনে খাল্লেকান (রা:) (ওফাত ৬৮১ হিজরী), ইমাম যাহাবী রা: (ওফাত ৭৪৮ হিজরী), ইমাম ইয়াফেয়ী (রা:) (ওফাত ৭৬৮ হিজরী), ইবনে হাজর আসকালানী (রা:) (ওফাত ৮৫২ হিজরী), ইবনে বাজ্জাজ কিরদারী রা: (ওফাত ৮২৭ হিজরী) এর মত বিভিন্ন মাযহাবের অসংখ্য মুহাদ্দেস ইমাম আবু হানিফা রা: এর সাথে সাহাবায়ে কেরামের সাক্ষাৎ ও শিক্ষা লাভের বিষয়টির অকৃত্তিম স্বীকৃতি প্রদান করেছেন।(২২) এছাড়া ইমাম আবু হানিফা (রা:) কর্তৃক সাহাবীদের কাছ থেকে হাদীস রেওয়ায়াত করার বিষয়ে ইমাম আবু নাঈম ফজল বিন দুকাইন (রা:) (ওফাত ২১৮ হিজরী), ইমাম ইয়াহইয়া বিন মঈন (রা:) (ওফাত ২৩৩ হিজরী), ইমাম আবু হামেদ আরানী (রা:) (ওফাত ৩২১ হিজরী), ইমাম আলী বিন মুহাম্মদ (রা:) (ওফাত ৩২৪ হিজরী), ইমাম মুহাম্মদ বিন ওমর যায়াবী (রা:) (ওফাত ৩৫৫ হিজরী), ইমাম আবু নাঈম ইসফাহানী (রা:) (ওফাত ৪৩০ হিজরী), ইমাম বায়হাকী (রা:) (ওফাত ৪৫৮ হিজরী), ইমাম ইবনে আব্দুল বার (রা:) (ওফাত ৪৬৩ হিজরী), ইমাম খাওয়ারিযিমী (রা:) (ওফাত ৬৬৫ হিজরী), হাফেজ ইবনে কাসীর (রা:) (ওফাত ৭৭৪ হিজরী) এর মত বিশ্বখ্যাত নির্ভরযোগ্য অসংখ্য মুহাদ্দেস স্বীকৃতি প্রদান করে বিভিন্ন কিতাবে তার বিস্তারিত বর্ণনাও দিয়েছেন।(২৩) সাহাবীদের কাছ থেকে হাদীস বর্ণনাকারী ও শিক্ষা লাভকারী ইমাম আবু হানিফা (রা) সম্পর্কে যদি বলা হয় যে, তিনি হাদীস জানতেন না বা হানাফী মাযহাব হাদীস বিরোধী তা-নিতান্ত অরুচীকর কথা বৈ কি?
পবিত্র মক্কা, মদীনা, কুফা ও বসরার জ্ঞানে সমৃদ্ধ ইমাম আবু হানিফা (রা:)-
ইমাম বুখারী (রা:) বলেন, মুহাদ্দেসীনদের সাহচর্যে যাওয়ার জন্য আমি কতবার কুফা এবং বাগদাদে গিয়েছি তার হিসাব নাই।(২৪)অসংখ্য বারের মত ইমাম বুখারীর (রা:) কেন কুফা নগরীতে যাওয়া? কারণ একটাই, মধুর কাছে মৌমাছির যাওয়া। হযরত আলী (রা) বলেন, ‘হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদকে আল্লাহ রহম করুন, যিনি কুফাকে জ্ঞানে ভরে দিয়েছেন ।(২৫) শুধু ইবনে মাসউদ (রা) ই নন। তিনশত আসহাবে হুদাইবিয়া ও সত্তরজন (২৬) বদরী সাহাবীসহ প্রায় দেড় হাজার (২৭) সাহাবী হযরত ওমর (রা) থেকে শুরু করে হযরত আলী (রা) এর খেলাফত আমল পর্যন্ত এই কুফা নগরীতে এসে বসবাস করেছেন এবং এখানেই প্রায় সকলের ইন্তেকাল হয়েছে। তাও আবার হযরত আলী (রা), হযরত ইবনে মাসউদ (রা), হযরত হুযাইফা (রা), হযরত আবু মুসা আশয়ারী (রা), হযরত সালমান ফারসী (রা), হযরত আবু কাতাদাহ (রা), হযরত বারা বিন আযেব (রা) এর মত বিশিষ্ট সাহাবীগণ। দেড় হাজার সাহাবীদের কাছে পড়–য়া কত তাবেয়ী ছাত্র তৈরী হয়েছে এখানে! এবং তাঁদের হাতে লাখো লাখো তাবে তাবেয়ী। তাই তো অগনিত বার এই পবিত্র নগরী কুফায় এসেছিলেন ইমাম বুখারী (রা:) হাদীসের নেশায়। আর জ্ঞান-বিজ্ঞানের আলোয় আলোকিত অসংখ্য সাহাবায়ে কেরামের আবাসস্থল এই পবিত্র কুফা নগরীই ইমাম আবু হানিফার (রা:) জম্মভূমি। মুহাম্মদ বিন সিরীন (রা) বলেন, ‘আমি কুফায় চার হাজার ছাত্র পেয়েছি যারা হাদীস অন্বেষণে ছিলেন এবং চার হাজার পেয়েছি ফকীহ।’(২৮) হাদীসের ইমাম আফফান বিন মুসলিম (রা:) (ওফাত ২২০ হিজরী) বলেন, ‘কুফায় এসে আমি চার মাস ছিলাম। এখানে হাদীসের এত ব্যাপক চর্চা ছিল যে, এই চার মাসে আমি চাইলে এক লাখ হাদীস লিখতে পারতাম। তবে পঞ্চাশ হাজারের বেশী লিখিনি।’ (২৯) চার মাসের অর্জন যদি পঞ্চাশ হাজার বা একলাখ হয়, তাহলে যে ইমাম আবু হানিফার (রা:) জীবনের সিংহভাগই অতিবাহিত হয়েছে কুফা নগরীতে, তাঁর হাদীসের অর্জন কত বিশাল হবে!!! অথচ এ যুগের তথা-কথিত পন্ডিত মশাইরা বলে ইমাম আবু হানিফা (রা) না কি হাদীস জানতেন না। ইমাম আবু দাউদ (রা) এর ছেলে আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমি কুফায় গিয়ে হযরত আবু সাইদ আল আশায (রা) থেকে দৈনিক এক হাজার অনুপাতে একমাসে ত্রিশ হাজার হাদীস লিপিবদ্ধ করেছি।’(৩০) থাকলো পবিত্র মক্কা ও মদীনা মুনাওয়ারার কথা। ইমাম আবু হানিফা (রা) পবিত্র মক্কা-মদীনার ইলমও পেয়েছিলেন কি না? মক্কা ও মদীনা শরীফেও তো অনেক সাহাবায়ে কেরাম ছিলেন। এ প্রশ্নের জবাব পাওয়ার জন্য ইমাম ইয়াহইয়া বিন আদম এর একটি বর্ণনা উল্লেখ করা প্রয়োজন মনে করছি। তিনি বলেন, ‘ইমাম আবু হানিফা (রা) ৫৫ বার পবিত্র হজ্জ্বব্রত পালন করেছেন।’(৩১) প্রতি হজ্জ্বের সফরে কমপক্ষে একমাস করে হলেও প্রায় ৫ বছর তিনি পবিত্র মক্কা নগরী ও মদীনা শরীফে অবস্থান করেছেন। ইমাম আবু দাউদের ছেলে যদি দৈনিক একহাজার হাদীস সংগ্রহ করতে পারেন সেক্ষেত্রে পবিত্র হারামাইনে গিয়ে ৫ বছর সময় কালে ইমাম আযম কত সংখ্যক হাদীস রপ্ত করেছিলেন তা আল্লাহই ভাল জানেন। হজ্জ্বের সফর ছাড়াও অতিরিক্ত আরও ছয় বছর তিনি পবিত্র হারামাইনে অবস্থান করেছিলেন (৩২) অর্থাৎ সর্বমোট ১০/১২ বছরের বিরাট সময় ইমাম আবু হানিফা (রা) অতিবাহিত করেছিলেন পবিত্র হারামাইনে। তার বিপরীতে ইমাম বুখারী পবিত্র হারামাঈনে ছিলেন মাত্র ছয় বছর।(৩৩) ইলমে হাদীস চর্চার আরেকটি কেন্দ্র ছিল বসরা নগরী। ইমাম বুখারী বলেন, আমি চারবার বসরায় গিয়েছি।(৩৪) তার বিপরীতে ইমাম আবু হানিফার বক্তব্য শুনুন, আমি বিশবার বসরায় গিয়েছি। উক্ত সফরে কখনও একবছর, কখন ও তার কম বেশী সেখানে অবস্থান করতাম। (৩৫)
ইমাম আবু হানিফা (রা)-শীর্ষস্থানীয় সাহাবায়ে কেরামের ইলমের উত্তরাধিকার-
হাদীস বিজ্ঞান গভীর ভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, ইমাম আবু হানিফা (রা) শীর্ষস্থানীয় সাহাবীদের ইলমের ওয়ারিশ ছিলেন। দুই সনদে হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা) থেকে, দুই সনদে হযরত ওমর (রা) থেকে, আট সনদে হযরত আয়েশা (রা) থেকে, সাত সনদে হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রা) থেকে, সাত সনদে হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা) থেকে, ছয় সনদে হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রা) থেকে ইলমে হাদীসের ওয়ারিশ হয়েছেন। এছাড়াও যে সকল তাবেয়ী থেকে ইমাম আবু হানিফা (রা) হাদীস বর্ণনা করেছেন তাঁরাও এক একজন অসংখ্য সাহাবীর দীর্ঘ সুহবত লাভ করে তাঁদের কাছ থেকে হাদীস শিক্ষা লাভ করেছেন এবং সেই সমুদয় ইলম উক্ত তাবেয়ী থেকে ইমাম আবু হানিফা শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। যেমন তাবেয়ী আত্বা বিন রাবাহ (রা) ইমাম আবু হানিফার ওস্তাদ। তিনি নিজেই বলেন, আমি ন্যূনতম ২০০ সাহাবীর সাক্ষাৎলাভে ধন্য হয়েছি। (৩৬) মানে দুইশত সাহাবীর ইলমের আমানত আত্বা বিন রাবাহ (রা) মারফত ইমাম আবু হানিফার কাছে এসেছে। এভাবে ইমাম শা’বীর কথা না বললেই নয়। সম্মানীয় এই তাবেয়ী নিজেই বলেন, আমি পাঁচশত সাহাবীর সাথে সাক্ষাৎ করার সৌভাগ্য অর্জন করেছি।(৩৭) ইবনে হিব্বান বলেন, দেড়শ সাহাবী থেকে তিনি হাদীস বর্ণনা করেছেন। (৩৮) আর এই ইমাম শা’বী হলেন ইমাম আবু হানিফার প্রথম সারির ওস্তাদ।(৩৯) এভাবে প্রবীণ তাবেয়ীদের মারফত ইমাম আবু হানিফা (রা) হাজার হাজার সাহাবীদের ইলমে হাদীসের জ্ঞান লাভ করে ধন্য হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হযরত ইবরাহিম নখয়ী (রা), হযরত ইকরামা (রা), কাসেম বিন আব্দুর রহমান (রা), হযরত নাফে (রা), হযরত কাতাদাহ (রা), ইবনে শিহাব জুহরী (রা), আবু ইসহাক সাবিয়ী (রা), মুহাম্মদ বিন মুনকাদির (রা), হযরত হিশাম বিন উরওয়াহ (রা), ইমাম আ’মশ (রা), উল্লিখিত তাবেয়ীগণ সকলেই সাহাবীদের ইলমের আমানতদার ছিলেন যাঁদের কাছ থেকে ইমাম আবু হানিফা (রা) ইলমে হাদীসের শিক্ষা লাভ করেছেন। এছাড়া আহলে বাইতে আতহার থেকে ইমাম বাকের (রা), ইমাম যায়েদ বিন আলী (রা), ইমাম আব্দুল্লাহ বিন আলী (রা), ইমাম জাফর সাদেক (রা), ইমাম আব্দুল্লাহ বিন হাসান আল মুসান্না (রা), ইমাম হাসান বিন যায়েদ (রা), ইমাম হাসান বিন মুহাম্মদ (রা) এবং ইমাম জাফর বিন তাম্মান (রা) এর মারফত ইমাম আবু হানিফা (রা) নবী পরিবারের ইলমের তোহফাও গ্রহণ করেছেন।(৪০) এ সকল নামী দামী মুহাদ্দেসগণ ছিলেন হাদীসের এক একটি ভান্ডার। লেখার কলেবর বৃদ্ধির আশংকায় ইলমে হাদীসে তাঁদের পান্ডিত্বের বিস্তারিত ফিরিস্তি তুলে ধরা সম্ভব হল না। তারপরও ইমাম আবু হানিফার হাদীস চর্চা নিয়ে প্রশ্ন তোলা অবান্তর।
ইমাম আবু হানিফা (রা) ও অন্যান্য মুহাদ্দেসের শিক্ষক সংখ্যা-
যারা ইমাম বুখারী-মুসলিমের সামনে ইমাম আবু হানিফাকে পাত্তা দিতে চান না এবং বলেন-তিনি হাদীস জানতেন না। তাদের অজ্ঞতা দুর করতে নিম্নের তথ্যটি মহৌষধের মত কাজ করবে। লক্ষ্য করুন, ইমাম মালেকের ওস্তাদ ৯০০ জন,(৪১) ইমাম আহমদ বিন হাম্বল ‘মুসনাদ’ গ্রন্থের বর্ণনাকারী ২৮০ জন,(৪২) মুসলিম শরীফে ইমাম মুসলিমের বর্ণনা কারী ২২০ জন,(৪৩) ইমাম তিরমিযীর ওস্তাদ ২২১ জন,(৪৪) ইমাম আবু দাউদের ওস্তাদ ৩০০ জন,(৪৫) ইমাম নাসায়ীর ওস্তাদ ৪৫০ জন, (৪৬) ইমাম বুখারীর ওস্তাদ তাঁর নিজের স্বীকৃতি অনুসারে ১০৮০ জন।(৪৭) অথচ শুধুমাত্র তাবেয়ীদের মধ্য থেকে ইমাম আবু হানিফার ওস্তাদ ৪০০০ জন।(৪৮) প্রতি ওস্তাদের কাছ থেকে গড়ে একটি হাদীস শিখলেও তো ৪০০০ হাদীস শেখা হয়। আর ইমাম আযম আবু হানিফা ও হানাফী মাযহাবের দুশমনেরা বলে তিনি নাকি বড় জোর ১৭টি হাদীস জানতেন!! হায় আফসোস!! তাছাড়া ইমাম বুখারীসহ সিহাহ সিত্তার ইমামদের ওস্তাদদের মধ্যে জঈফ রাভীও ছিল। কিন্তু ইমাম আবু হানিফার ওস্তাদদের মধ্যে কেউ জঈফ ছিলেন না। সকলেই নির্ভরযোগ্য ছিলেন। কারণ, তখন ছিল তাবেয়ী যুগ। জাল হাদীসের ফিতনা তখনও শুরুই হয়নি। এ দিক থেকেও ইমাম আবু হানিফার মর্যাদা আকাশের উচ্চতায়।
ইমাম আবু হানিফা (রা) ও ইমাম বুখারী (রা)-
তথ্য মোতাবেক দেখা যায় যে, ইমাম বুখারীর ওস্তাদ কখনও ইমাম আবু হানিফার ছাত্র, কখনও ছাত্রের ছাত্র। এভাবে ইলমে আবু হানিফা (রা) ইমাম বুখারীর ভান্ডারে এসেছে। ইমাম বুখারী নিজেও বলেছেন, আমার বয়স যখন ষোল, আমি (ইমাম আবু হানিফার ছাত্র) ইবনুল মুবারক ও ওয়াকির কিতাব মুখস্থ করেছি এবং তাদের বক্তব্যগুলো রপ্ত করেছি।(৪৯) ইবনুল মুবারকের কিতাবে কি ছিল, তাঁর নিজের কথাতেই শুনি। তিনি বলেন, আমি ইমাম আবু হানিফা (রা) এর কিতাব অনেকবার লিখেছি। কখনও নতুন কিছু যুক্ত হলে তাও লিখে নিতাম। (৫০) ইমাম আত্বিয়া বিন আসবাত্ব বলেন, ইবনুল মুবারক কুফায় আগমন করে ইমাম যুফরের কাছে গিয়ে ইমাম আবু হানিফা (রা) কিতাবগুলো ধার নিয়ে তা লিখে নিতেন। অনেক বারই এমনটি হয়েছে।(৫১) বুঝা গেল, ইমাম আব্দুল্লাহ বিন মুবারকের কিতাবগুলো ছিল ইমাম আবু হানিফার ইলমের প্রবাহিত একটা নহর। সেখান থেকে ইমাম বুখারী শীতলতা লাভ করেছেন। এছাড়াও বুখারী শরীফের সবচেয়ে ঐতিহ্যপুর্ণ ও সম্মানের বৈশিষ্টটি হলো সোলাসিয়াত তথা সর্বনিম্ন তিনজন বর্ণনাকারীর মাধ্যমে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রাপ্ত ২২টি হাদীস। এটা বুখারী শরীফের অনেক বড় বৈশিষ্ট্য। এ কারণে বুখারী শরীফ সিহাহ সিত্তার মধ্যে অনন্য। একথা সবাই জানেন এবং বলেনও। কিন্তু বলেন না তার ভেতরের কথাটি। তা হলো, ঐ ২২টি হাদীসের মধ্যে ২১টি হাদীসের বর্ণনাকারীই ইমাম আবু হানিফার ছাত্র। মুলতঃ সিহাহ সিত্তার অধিকাংশ হাদীসের গভীরে অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে বর্ণনাকারীগণ হয় ইমাম আবু হানিফা (রা) এর ছাত্র না হয় ওস্তাদ।
ইমাম বুখারী (রা) ও মুসলিম (রা) ইমাম আবু হানিফা (রা) থেকে হাদীস বর্ণনা না করার কারণ-
পাঠক, ইমাম আবু হানিফা (রা) ও হানাফী মাযহাব বিরোধীরা বড় তৃপ্তিসহকারে একটি কথা বলে যে, ইমাম আবু হানিফা (রা) যদি হাদীসের ইমাম হতেন বা ইলমে হাদীসে নির্ভরযোগ্য মুহাদ্দেস হতেন তাহলে ইমাম বুখারী ও মুসলিম তাঁর সনদে কোন হাদীস গ্রহণ করেন নি কেন? তাতেই বুঝা যায় ইমাম আবু হানিফা (রা) হাদীসের ইমাম ছিলেন না বা হাদীসের নির্ভরযোগ্য পন্ডিত ছিলেন না। এ কথা বলে বিরোধীরা মনে করে হানাফী মাযহাবের গলা কর্তন করার কাজটি সম্পন্ন করা হয়েছে। এটা তাদের জন্য স্বর্গ সুখের তৃপ্তি দান করে। পাঠক ধৈর্য ও মনোযোগ সহকারে বক্ষমান অংশটি পড়–ন। তাহলে বিরোধীদের যুক্তির অসারতা দিবালোকের মত স্পষ্ট হয়ে যাবে।
বিরোধীদের কাছে প্রশ্ন করুন, বুখারী ও মুসলিম শরীফে ইমাম শাফেয়ী (রা) এর সূত্রে কোন হাদীস আছে? জবাব হল ‘নাই’। ইমাম মুসলিম ইমাম বুখারীর ছাত্র। সুযোগ পেলে ওস্তাদের কদমবুচিও করতেন । তা সত্ত্বেও মুসলিম শরীফে ইমাম বুখারীর জায়গা নেই। ছাত্র হয়েও ইমাম মুসলিম তাঁর সহীহ মুসলিমে অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য ওস্তাদ ইমাম মুহাম্মদ বিন ইয়াহইয়া বিন আব্দুল্লাহ বিন খালেদ জুহালীর হাদীস গ্রহণ করেন নি। অথচ, ইমাম জুহালী স্বর্বজন স্বীকৃত উচুঁ মানের একজন হাদীসের ইমাম। ইমাম আহমদ বিন হাম্বল ইলমে হাদীসের মহাসাগর হয়েও বুখারী শরীফে জায়গা পেয়েছেন মাত্র দুইবার। ইমাম আবু জুরআ রাযী (রা) আরেক বড় ইমাম । তিনি ইমাম বুখারী, মুসলিম ও তিরমিযীর ওস্তাদ। ইমাম মুসলিম বলেন, আমি সহিহ মুসলিম লিখে হযরত আবু জুরআ রাযী (রা) এর কাছে উপস্থাপন করি। সেখান থেকে তিনি যে গুলো সহিহ বলেছেন-তা রেখেছি। আর যেগুলো আপত্তি দিয়েছেন-সেগুলো ছেড়ে দিয়েছি।(৫২) যার কাছে সহিহ মুসলিমকে সহিহ বানাতে দিলেন তাঁর কাছ থেকে উক্ত কিতাবে হাদীস নিলেন মাত্র একটি। ইমাম তিরমিযী ইমাম মুসলিমের ছাত্র। শুধু পাঠশালায়ই নয়, দিনের পর দিন ইমাম মুসলিমের সফরসঙ্গী ছিলেন তিনি। অথচ, তিরমিযী শরীফে ইমাম মুসলিমের সূত্রে হাদীস মাত্র একটি। অনুরূপ ইমাম নাসায়ী ইমাম বুখারীর ঘনিষ্ঠ ছাত্র হয়েও সুনানে নাসায়ীতে ইমাম বুখারী একবারের বেশী জায়গা দেন নি। ইমাম আহমদ বিন হাম্বল ছিলেন ইমাম শাফেয়ীর ঘনিষ্ঠ ছাত্র। মুসনাদে আহমদের প্রায় সাতাশ হাজার হাদীসের মধ্যে ইমাম শাফেয়ীর অংশ গ্রহণ মাত্র নয়টি হাদীসে।
ইমাম বুখারী ও মুসলিম ইমাম আবু হানিফা (রা) থেকে হাদীস বর্ণনা না করা যদি ইমাম আবু হানিফা (রা) এর হাদীস না জানার বা জঈফ হওয়ার প্রমাণ হয় তাহলে ইমাম শাফেয়ীও কি হাদীস জানতেন না? সহিহ মুসলিমে বর্ণনা না থাকার কারণে ইমাম বুখারীও কি জঈফ? ইমাম জুহালীর ব্যাপারেও কি বলবেন আপনি। এই মানদন্ডে বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, আহমদ বিন হাম্বল, ইমাম আবু জুরআ সকলেই জঈফ সাবস্ত হবেন? আসলে হানাফী মাযহাব ও ইমাম আবু হানিফা (রা) এর প্রতি বিরুদ্ধবাদীদের এটা কালের রটনা। ইমাম আবু হানিফার বিরুদ্ধে যত ষড়যন্ত্র হয়েছে তা অন্য কোন ইমামের ক্ষেত্রে হয়নি। ইমাম বুখারী ইমাম আবু হানিফা থেকে হাদীস গ্রহণ না করার কারণ মুলতঃ ঈমান এর সংজ্ঞার ক্ষেত্রে মতবিরোধ। ইমাম বুখারীর মতে মৌখিক স্বীকৃতি এবং আমল এর নাম ঈমান। আর ইমাম আবু হানিফার মতে অন্তরের বিশ্বাস আর মৌখিক স্বীকৃতির নাম “ঈমান”। আর হাদীস গ্রহণের ক্ষেত্রে ইমাম বুখারীর মৌলিক কিছু নীতিমালা ছিল। তিনি নিজেই বলেন, আমি সহস্রাধিক মুহাদ্দিস থেকে হাদীস গ্রহণ করেছি। তবে আমি এমন কারও কাছ থেকে হাদীস লিখিনি যারা শুধু মৌখিক স্বীকৃতি ও অন্তরের বিশ্বাসকে ঈমান মনে করে, বরং তাদের কাছ থেকেই লিখেছি যারা মৌখিক স্বীকৃতি ও আমলকে ঈমান জ্ঞান করে।(৫৩) এভাবে প্রত্যেক মুহাদ্দিসেরই হাদীস গ্রহণ ও লিপিবদ্ধ করার ক্ষেত্রে মৌলিক কিছু নীতিমালা থাকে। ঐ নীতিমালার কারণে কারও হাদীস বাদ পড়ে থাকলে তা ঐ মুহাদ্দিস জঈফ হওয়ার দলীল বহন করে না। এ রকম নীতিমালার করণেই মুসলিম শরীফে ইমাম বুখারী ও ইমাম জুহালীর জায়গা হয়নি। বুখারী ও মুসলিমে ইমাম শাফেয়ীর সনদে কোন হাদীস স্থান লাভ করেনি। এছাড়া ইমাম আবু হানিফা (রা) এর সময়ে মু’তাজিলা, ক্বদরিয়া ও মুরজিয়ার মত বাতিল ফেরকার শক্ত প্রচারনা ও অবস্থান ছিল। ইমাম আবু হানিফা (রা) তাদের বিরুদ্ধে পুরো শক্তি দিয়ে লৌহবর্মের মত প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। ইমাম আবু হানিফার মত এত বড় মাপের ইমামের প্রতিরোধে ঐ সকল বাতিল ফেরকাগুলো আহত বাঘের মত প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে ইমাম আযমের উপর ‘মরজিয়া’ হওয়ার আপবাদ রটিয়ে দেয় পূর্ণ শক্তি নিয়ে। অপবাদের এই রটনায় বিভ্রান্ত হয়েছেন অনেক মুহাদ্দিস এবং সে কারণে ইমাম আবু হানিফাকে অনেকেই উল্লেখ করতে চান নি। এই অপবাদের মূলে গিয়ে যারা ইমাম আজমকে অন্বেষণ করেছেন তারা ইমাম আবু হানিফাকে খোঁজে পেয়েছেন ‘সেরাজুল উম্মত’ হিসেবে ‘ইমামুল আয়িম্মা ফিল হাদীস’ হিসেবে, ‘ফকীহুল উম্মত’ হিসেবে। অপবাদের কালো মেঘটা সরে যাওয়ার পর ইমাম আবু হানিফা থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনে হিব্বান, ইবনে খুজাইমা, ইবনে মুবারক, আহমদ বিন হাম্বল (রা) এর মত নামি দামি সব মুহাদ্দিস।
📗📚📗তথ্যসূত্রঃ📗📚📗
০১. *মুহাম্মদ বিন ঈসমাইল বুখারী, আল সহীহ, হাদীস নং-২৫০৮,৩৪৫০
**মুসলিম বিন হাজ্জাজ, আল সহীহ, হাদীস নং-২৫৩৫
*নাসায়ী, আল সুনান, হাদীস নং-৩৮০৯
০২. ড. তাহের আল কাদেরী, ইমাম আবূ হানিফা -ইমামুল আয়িম্মা ফিল হাদীস
০৩. মুসলিম বিন হাজ্জাজ, আল সহীহ, হাদীস নং-২৫৪৬
০৪. আহমদ বিন হাম্বল, আল মুসনাদ, ২য় খন্ড, হাদীস নং-২৯৬
০৫. *জালাল উদ্দীন সূয়ুতী, তাবয়ীদুস সহীফা, পৃষ্ঠা নং-৩১-৩৩
**ইবনে হাজার হাইতামী, আল খায়রাতুল হিসান, পৃষ্ঠা নং-২৪
০৬. *খতীব বাগদাদী, তারিখে বাগদাদ, খন্ড নং-১৩, পৃষ্ঠা নং-৩৪৬
**শামসুদ্দিন যাহাভী,সিয়ারু আলামিন নুবালা, খন্ড নং-৬, পৃষ্ঠা নং-৪০৩
০৭. *খতীব বাগদাদী, তারিখে বাগদাদ, খন্ড নং-১৩, পৃষ্ঠা নং-৩৪৫
**ইমাম মিজ্জি, তাহযিবুল কামাল, খন্ড নং-২৯, পৃষ্ঠা নং-৪৩৩
*শামসুদ্দিন যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, পৃষ্ঠা নং-৬, পৃষ্টা নং-৪০২
**জালাল উদ্দীন সূয়ুতী, তাবয়ীদুস সহীফা, পৃষ্ঠা নং-১০৫
০৮. মাগাযী, জিহাদ বিষয়ক তত্ত্বাবলিকে মাগাযী বলে
০৯. সাইমিরি, আখবারু আবি হানীফা , পৃষ্ঠা নং-৭৫
১০. ইবনে বাজ্জাজ, মানাকিবুল ইমামিল আযম, খন্ড নং-১, পৃষ্ঠা নং-৯৭
১১. প্রাগুক্ত
১২. * সাইমিরি, আখবারু আবি হানীফা , পৃষ্ঠা নং-৭৫
**খতীব বাগদাদী, তারিখে বাগদাদ, খন্ড নং-১৩, পৃষ্ঠা নং-৩৪৩
*ইবনে হাজার হাইতামী, আল খায়রাতুল হিসান, পৃষ্ঠা নং-৪৫
১৩. * খতীব বাগদাদী, তারিখে বাগদাদ, খন্ড নং-১৩, পৃষ্ঠা নং-৩৩৮
**ইমাম মিজ্জি, তাহযিবুল কামাল, খন্ড নং-২৯, পৃষ্ঠা নং-৪২৯
*ইবনে হাজার হাইতামী, আল খায়রাতুল হিসান, পৃষ্ঠা নং-১২
১৪. খতীব বাগদাদী, তারিখে বাগদাদ, খন্ড নং-১৩, পৃষ্ঠা নং-৩৪০
১৫. খতীব বাগদাদী, তারিখে বাগদাদ, খন্ড নং-১৩, পৃষ্ঠা নং-৩৪২
১৬. *ইবনে হিব্বান, আল সিক্বাত, হাদীস নং-১৪৪৬৫
**ইবনে আদি, আল কামিল,খন্ড নং-৭, পৃষ্ঠা নং-৭
১৭. ইবনে আবি যায়েদ আল কিরাওয়ানী, আল জামে, পৃষ্ঠা নং-১১৭
১৮. * মুহাম্মদ বিন ঈসমাইল বুখারী, আল সহীহ, হাদীস নং-৭১, ২৯৪৮
**মুসলিম বিন হাজ্জাজ, আল সহীহ, হাদীস নং-১০৩৭
১৯. *তাবরানী, আল মু’জামুল আওসাত, হাদীস নং-৬১৬৬
**দারু কুতনী, আল সুনান, হাদীস নং-২৯৪
*বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-১৭১২
২০. ড. তাহের আল কাদেরী, ইমাম আবূ হানিফা -ইমামুল আয়িম্মা ফিল হাদীস, পৃষ্ঠা নং-১২৫-১৫২
২১. *তিরমিজি, আল জামে, হাদীস নং-২৬৫৬
**আবূ দাউদ, আল সুনান, হাদীস নং-৩৬৬০
*আহমদ বিন হাম্বল, আল মুসনাদ, হাদীস নং-২১৬৩০
**নাসায়ী, আল সুনান, হাদীস নং-৭৪৭
***ইবনে মাজাহ, আল সুনান, হাদীস নং-২৩৫
**দারেমী, আল সুনান, হাদীস নং-২২৯
২২. ড. তাহের আল কাদেরী, ইমাম আবূ হানিফা -ইমামুল আয়িম্মা ফিল হাদীস
২৩. প্রাগুক্ত
২৪. ইবনে হাজার আসকালানী, হাদীওসসারী, পৃষ্ঠা নং-৪৭৮
২৫. যায়লায়ী,নুসবুর রায়া, খন্ড নং-১, পৃষ্ঠা নং-৩০
২৬. ড. তাহের আল কাদেরী, ইমাম আবূ হানিফা -ইমামুল আয়িম্মা ফিল হাদীস
২৭. ড. তাহের আল কাদেরী, ইমাম আবূ হানিফা -ইমামুল আয়িম্মা ফিল হাদীস
২৮. * ইমাম মিজ্জি, তাহযিবুল কামাল, খন্ড নং-১২, পৃষ্ঠা নং-৪৩৯
**জালালুদ্দীন সূয়ুতী, তবকাতুল হুফ্ফাজ, খন্ড নং-১, পৃষ্ঠা নং-২৭
২৯. খতীব বাগদাদী, আল জামে’, খন্ড নং-২, পৃষ্ঠা নং-২৪৪
৩০. *খতীব বাগদাদী, তারিখে বাগদাদ, পৃষ্ঠা নং-৪৬৬
**শামসুদ্দিন যাহাভী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, খন্ড নং-১৩, পৃষ্ঠা নং-২২৩
৩১. *মুয়াফ্ফাক, মানাকিবুল ইমাম আল আযম, খন্ড নং-১, পৃষ্ঠা নং-২৫৩
**যাইলায়ী, নুসবুর রায়া, খন্ড নং-১, পৃষ্ঠা নং-৩৬
৩২. ড. তা
হানাফি (আরবি: الحنفي) হল সুন্নী সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি মাযহাব।এই মাযহাব অবলম্বী মানুষেরা ইমাম আবু হানিফার অনুসারী (কুরআন সুন্নাহর প্রকৃত অনুসারী)। বহু মুসলিম দেশে এই মাযহাব প্রচলিত। ইমাম আবু হানিফার বাস ছিল কুফা শহরে। সৌদি আরবের উত্তরে যে সব দেশে স্থলপথে ইসলাম প্রবেশ করেছিল সে সব দেশে এই মাযহাব প্রচলিত। বিশ্বের ৫৫% মুসলিম দেশে হানাফী মাযহাবের আছে অন্যরা নগন্য।
অধুনিক সময়কালে হানাফী মতবাদের অনুসারী রয়েছেন এমন দেশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: সুদান, মিশর, জর্দান, সিরিয়া, ইরাক, তুরস্ক, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ, উজবেকিস্তান , আলবেনিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, কাজাখস্তান, তাজিকিস্তান, কিরগিজিস্তান এবং তুর্কমেনিস্তানে এই মাযহাবের অনুসারী মানুষ বেশি।
ইমাম শাফি-(রহ) বলেন, যে ব্যক্তি ফেকাহর জ্ঞান অর্জন করতে চায়, সে যেন ইমাম আবু হানিফা এবং তার ছাত্রদের সান্নিধ্য লাভ করে। কারণ ফেকাহর ব্যাপারে সকলেই আবু হানিফা-র মুখাপেক্ষী।
ইমাম আবু হানিফা,
১/ ইমাম আবু হানিফা (রহ.) একজন তাবেই ছিলেন।
২/ ইমাম আবু হানিফা (রহ.) হাদিস শাস্ত্রে অতুলনীয় জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন।
৩/ ইমাম আবু হানীফা (রহ) হাফিযুল হাদীস ছিলেন।
৪/ ইমাম আবু হানিফা (রহ.) ফিকহ শাস্ত্রের আবিষ্কারক ছিলেন।
৫/ ইমাম আবু হানিফা তার সময়কালের শ্রেষ্ঠ আলেম ছিলেন।
৬/ ইমাম আবু হানিফা (রহ) কেবলমাত্র কারাগারে বসেই ১২ লক্ষ ৯০ হাজারের অধিক মাসয়ালা লিপিবদ্ধ করেছেন' ।
৭/ ইমাম আবু হানিফা (রহ) হিজরী প্রথম শতাব্দীর মানুষ।
৮/ ইমাম আবু হানিফা (রহ) মুজতাহিদ ছিলেন।
৯/ ইমাম আবু হানিফা (রহ) এর মাযহাব কুরআন সুন্নাহর উপর প্রতিষ্ট।
-মুফতী আবুল কাশেম মুহামমদ ফজলুল হক